দৈনিক দেশের মানচিত্রের বিশেষ সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধা মোজাফফর আহাম্মদ এর কথা তুলে ধরেছেন মনজুরুল ইসলাম –
দেশের মানচিত্র : আপনি কিভাবে মনে করলেন যে মুক্তিযুদ্ধে যাবার সময় হয়ে গিয়েছে ?
মোজাফফর : যখন এলাকাতে হানাদার বাহিনীর আনাগোনা শুরু হয়েছে এবং ঠিক তখনই বুঝলাম যে আমাদের এই বয়সই হল দেশকে মুক্ত করার।শেখ মুজিবের ০৭ ই মার্চের ভাষনেই আমরা স্পষ্ট হয় তা।চারিদিকে স্লোগানঃ “তোমার দেশ আমার দেশ, বাংলাদেশ বাংলাদেশ। ” তোমার আমার ঠিকানা পদ্না মেঘনা যমুনা এভাবে মানুষের মনে দেশ প্রেম জাগ্রত হয়।মিছিলে মিছিলে আমি ও আমার এলাকার আরও বেশ কয়েকজন সহ চলে গেলাম ভারতে।
দেশের মানচিত্র : মুক্তিযুদ্ধের সময় আপনার বয়স কত ছিলো?
মোজাফফর : আমি তখন এস এস সি পরীক্ষার্থী ছিলাম, বর্তমানে আমার বয়স ৭০ বছর।তখন আর পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে পারিনি।
দেশের মানচিত্র : আপনার ভূমিকা কী মুক্তিযুদ্ধে?
মোজাফফর : পান্জাবীরা, বিহারিরা বাংলাদেশকে শোষণ করতেছে আমরা এটা দেখে জেনে সহ্য করতে না পেরে একসাথে উদ্ধুদ্ধ হয়।আমার সাথে সামশু, ইসহাক,নুরুল,ইসমাইল, এলাকার আরও অনেকে আমি তাদেরকে নেতৃত্ব দেই।এবং আমাদের পরে আসে সিটি কলেজের ছেলেরা।আমরা একসাথে হয়ে মিছিল করতে করেত ভারতে যাই, অনেক সময় না খেয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি।০১ নং সেক্টরে ছিলাম আমি, সব কষ্ট, জেল,জুলুম, অত্যাচার সহ্য করে আজকের বাংলাদেশ।
দেশের মানচিত্র : আপনার জানামতে যারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন সবাই মুক্তিযুদ্ধের খেতাব পেয়েছেন কি?
মোজাফফর : দেখেন মুক্তিযুদ্ধে অনেক বেশি অবদান আমাদের মা-বোনদের কিন্তু তাদেরকে সে মর্যাদা দেওয়া হয় নি এবং সনাক্ত করা হয়নি।উনারা অনেক ঝুঁকির মধ্যে সহযোগিতা করেছেন। যদিও বর্তমান সরকার এখন এটা নিয়ে কাজ করছেন।
দেশের মানচিত্র : পাকিস্তানি সেনা আর আপনাদের যুদ্ধের কৌশলে কি পার্থক্য ছিল?
মোজাফফর : তারা খানসেনা , তাদের রণকৌশল অনেক ,তাদের দেখা যেতো তারা দুই হাতেই অস্ত্রধরে ফায়ারিং করতো,আর আমরা একহাতে ।আমাদের অস্ত্রছিল রাশিয়ান , আর ওদের চায়না অস্ত্র।
দেশের মানচিত্র : মহান একুশে ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে এবং ভাষা শহীদের সম্পর্কে কিছু বলুন-
মোজাফফর : যারা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে বাংলাকে মায়ের ভাষা ও ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে গেছেন তাদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলা মায়ের দামাল সন্তানেরা যারা জীবনের প্রতি মায়া না রেখে বীরের বেশে মায়ের ভাষা বাংলাকে প্রতিষ্ঠিত করার দাবীতে মিছিলে মিছিলে রাজপথ প্রকম্পিত করেছিলেন, যারা সেদিন নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে আমাদেরকে বাংলা ভাষায় কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছেন, তাদের প্রতি জানাই অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে বিনম্র শ্রদ্ধা।
দেশের মানচিত্র : আপনার প্রিয় নেতা এবং তার দিক নির্দেশনা সম্পর্কে শুনতে চাই।
মোজাফফর : এখানে কেউ নেতা ছিলো এমন না,জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ০৭ ই মার্চের ভাষন শুনেই সাহস ও শক্তি জুগিয়েছে মূলত।
মনজুরুল : অনেকে ভুয়া ভাবে মুক্তিযুদ্ধা সনদ করেছে এখানে ভুল কোথায়?
মোজাফফর : এটা অনেক নেতাদের দোষ। তারাতো সবাই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে নাই কিন্তু তারা নানাভাবে প্রলোভিত হয়ে সনদ দিয়ে দিয়েছে কিন্তু অনেকে মুক্তিযুদ্ধ করেও পাই নাই। এবং এটা ঠিক করাও সম্ভব না কারণ মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে চক্রান্ত পূর্বেও হয়েছে এখনো চলমান রয়েছে।
দেশের মানচিত্র : চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ ও জাদুঘর তৈরির প্রস্তাবনা হয়েছিলো তা কতটুকু অগ্রসর?
মোজাফফর : আজকেও এটা নিয়ে কথা হবে,অতি শীগ্রই ভালো কিছু হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
দেশের মানচিত্র : এখন আপনাদের সময় কাটছে কিভাবে এবং পরিবারের সদস্য রয়েছেন কে কে?
মোজাফফর : ০২ মেয়ে, ছেলে রয়েছে এবং আমার সহধর্মিণী রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠনের দায়িত্বে রয়েছি,বই মেলা,বিভিন্ন সংগঠনের সাথে যুক্ত থেকে সময় যাচ্ছে।
দেশের মানচিত্র : সর্বশেষে একটি প্রশ্ন করব, তরুনদের উদ্দেশ্যে কোনো উপদেশ রয়েছে আপনার পক্ষ হতে?
মোজাফফর : আসলে,একটা কথা না বললেই নয়,”স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন।”তরুন রাই দেশের ভবিষ্যত। কোনো কিছু উদ্ভাবন হলে তরুনদের হাত দিয়েই হয়। কাজেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারন করে তারা যদি সৎ পথে এগোয়, আমার বিশ্বাস এদেশের উন্নতি আটকানো মুশকিল হয়ে যাবে।নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তুলে ধরতে হবে।বই-পুস্তকের মাধ্যমে তাদেরকে জানিয়ে দিতে হবে।